মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর উপায় - নেট স্লো হলে করণীয়?

আপনার মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড কি খুব স্লো কাজ করেছে? এবং জানতে চাচ্ছেন মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর উপায় কি? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক নেট স্লো হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে।

মোবাইলের-ইন্টারনেট-স্পিড-বাড়ানোর-উপায়

আমরা ধারাবাহিকভাবে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্র: মোবাইলে ইন্টারনেট স্পীড বেশী করার নিয়ম

মোবাইলে ইন্টারনেট স্পিড স্লো হওয়ার মূল কারণগুলো কি কি হতে পারে?

বর্তমান যুগে মোবাইল ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। কাজ, পড়াশোনা, বিনোদন কিংবা যোগাযোগ সবকিছুই এখন ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড কমে যায় বা নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ করে না। এতে শুধু সময়ই নষ্ট হয় না, প্রয়োজনীয় কাজও ব্যাহত হয় এবং কাজের প্রতি একটা অনিহা চলে আসে। তাই মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর কিছু কার্যকর উপায় জানা জরুরি। আর এই উপায়গুলো অবলম্বন করে আপনি খুব সহজে আপনার ফোনের ইন্টারনেট স্পিড বাড়িয়ে নিতে পারে। নিচে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করেছি মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর উপায় সমূহ সম্পর্কে।

ফোনের অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইন্সটল করুন

মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায়গুলোর মধ্যে একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে ফোনের থাকা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডিলিট বা আনইন্সটল করা। আমরা অনেকেই আছি যারা কাজের প্রয়োজনে অনেক অ্যাপ ফোনে ইন্সটল করি আর কাজ শেষ হয়ে গেলে এগুলো আর আনইন্সটল করার কথা মনে থাকেনা। ফোনে থাকা এই প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো যেমন ফোনের র‌্যামের উপর প্রভাব ফেলে একই ভাবে ফোনের ব্যাটারি সহ আমাদের মূল জিনিস অর্থাৎ ইন্টারনেট স্লো করে দেওয়ার মতো কাজ করে। এই অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো অযথা ব্যাকগ্রাউন্ডে নেট কেটে নেয় যা আমাদের অজান্তে। তাই আপনি যদি আপনার ফোনে থাকা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোকে আনইন্সটল করেন তবে আপনার নেটের গতি বেশ ভালোই বাড়বে।

ব্রাউজার হিস্ট্রি ও ক্যাশ ক্লিয়ার করে ইন্টারনেট স্পিড ফাস্ট করুন

ব্রাউজার হিস্ট্রি ও ক্যাশ ক্লিয়ার করে মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর উপায় বলা যায় এটিকে। কেননা আমরা যেকোনো কিছু অনুসন্ধান করার জন্য ফোনের ব্রাউজার যেমন: গুগল, ক্রোম, মজিলা, অপেরা এ জাতীয় সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে থাকি। আর আমরা যখন এই বিষয়গুলো সার্চ করি এবং বেশ কয়েকটি সাইটে প্রবেশ করি তখন আমাদের ব্রাউজিং হিস্ট্রি জমা থাকে ব্রাউজারের মধ্যে। আর এই ব্রাউজিং হিস্ট্রি যত ভারী হবে নেট চালাতে তত বিগ্ন ঘটবে। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত ব্রাউজিং হিস্ট্রি ক্লিয়ার করা। 

আর রইল ক্যাশ, ক্যাশ মূলত অ্যাপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে জমা হয়। এই ক্যাশের সাথে আবার ডাটাও জমা পড়ে থাকে। এগুলো ডিলিট করার জন্য অ্যাপ ইনফো তে গিয়ে ক্লিয়ার করে দিলেই হবে। আমরা যদি নিয়মিত এসব জিনিস ফোন থেকে ক্লিয়ার করি তবে আমাদের ফোন তো ফাস্ট হবেই সাথে সাথে ফাস্ট হবে আমাদের ইন্টারনেট স্পিড।

ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ করলে কীভাবে নেট দ্রুত হয়?

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর উপায়গুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ করলে কি নেট দ্রুত কাজ করে? হ্যাঁ এটি একটি কার্যকর উপায় হিসেবে ধরা হয়। কেননা কিছু কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো বিনাকারণে ব্যাকগ্রাউন্ডে রান করে এবং ডাটা ব্যবহার করে থাকে। আপনি এই অ্যাপগুলো না চালালেও আপনি যখন নেট অন করবেন তখন এগুলো অটো ডাটা কানেক্ট পেয়ে যায় এবং অ্যাপগুলো সেসময় ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে রান থাকা অবস্থায় ডাটা কেটে নেয়। করনীয় হচ্ছে, সেই অ্যাপগুলোর App Info-তে গিয়ে Mobile Data-তে যাবেন আর সেখান থেকে Allow background data usage অপশনটি অন থাকবে সেটিকে অফ করে দিবেন তাহলে সেই অ্যাপ আর ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা অবস্থায় নেট সংযোগ পাবেননা এবং আপনার মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড দ্বিগুণ হবে।

ফোনের মেমোরি ক্লিয়ার করুন

কিছু কিছু সময় ফোনের মেমোরি অতিরিক্ত ভারী হয়ে গেলে ফোন কিছুটা স্লো কাজ করে। তাই আমাদের উচিত ফোনের অব্যবহৃত ফাইল ও অ্যাপগুলো ডিলিট করে দেওয়া। কেননা এগুলোর জন্য ফোন স্লো হয়ে যায়, আর ফোন স্লো কাজ করলে নেট তো স্লো কাজ করবেই। নিয়মিত ফোনে জমে থাকা অপ্রয়োজনী জিনিসগুলোকে ডিলিট বা ক্লিয়ার করে ইন্টারনেট স্পিড বাড়িয়ে নিন।

নেটওয়ার্ক সেটিংস রিসেট করে স্পিড বৃদ্ধি করুন

মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর উপায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকর উপায় হচ্ছে নেটওয়ার্ক রিসেট। মাঝে মাঝে আমাদের নেট এতটা স্লো কাজ করে যা বলার বাহিরে। নেট যখন স্লো কাজ করে তখন আমাদের মন চাই ফোনটিকে মাটিতে ছুরে মারে ভেঙে ফেলি। কিন্তু আমরা সেটি করতে পারিনা, যেহেতু নিজের টাকায় কেনা ফোন কষ্ট তো হবেই। তাই আপনার এই ধীরগতির নেটকে দ্রুত করার জন্য এই উপায়টি হতে পারে একটি কার্যকর উপায়। নেটওয়ার্ক সেটিংস রিসেট করুন দেখবেন আপনার নেট আগের থেকে অনেকটা ফাস্ট কাজ করছে। কিভাবে এটি করবেন? ফোনের সেটিংয়ে যাবেন, সার্চ করবেন নেটওয়ার্ক রিসেট বা রিসেট নামে। সেখান থেকে অপশন পাবেন নেটওয়ার্ক রিসেট সেখানে ক্লিক করে আপনার নেটওয়ার্ক রিসেট হয়ে যাবে। আর নেটওয়ার্ক রিসেটের সময় মাথায় রাখবেন, আপনি যখন এটিকে রিসেট করবেন তখন আপনার ফোনে এযাবৎ যত WiFi নেটওয়ার্ক কানেক্ট ছিল সেগুলো সব হারিয়ে যাবে এবং পুনরায় সেগুলোর পাসওয়ার্ড দিয়ে সংযোগ করতে হবে। তাই যদি আপনার WiFi এর পাসওয়ার্ড জানা না থাকে তবে সেটি সর্বপ্রথম জেনে নিন এবং তারপর নেটওয়ার্ক রিসেট করুন।

সফটওয়্যার আপডেট চেক করুন

সফটওয়্যার আপডেট হচ্ছে ফোনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মেজর আপডেট। আমাদের করনীয় হচ্ছে নিয়মিত ফোনকে আপডেট করা এবং ফোন আপডেট চাইলে তৎক্ষণাত ফোনকে আপডেট করে নেওয়া। কেননা ফোনে আপডেট আসার কারণ হচ্ছে ফোনে নতুন কিছু ফিচার যুক্ত হবে যা ফোনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আপডেটগুলো আসে মূলত ফোনের পারফরম্যান্সকে বৃদ্ধির জন্য। তাই ফোনকে আপডেটেড রাখুন।

4G-ও-5G-নেটওয়ার্ক-সিলেক্ট-করে-ইন্টারনেট-স্পিড-ফাস্ট-করুন

4G ও 5G নেটওয়ার্ক সিলেক্ট করে ইন্টারনেট স্পিড ফাস্ট করুন

মোবাইলে ইন্টারনেট স্পীড বেশী করার নিয়ম গুলোর মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হচ্ছে ফোনের নেটওয়ার্ক সিলেকশন ঠিকঠাক রাখা। মাঝে মাঝে নেট স্লো হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে আপনার ফোনের নেটওয়ার্ক অপশনে সঠিক সিলেকশন নেই। আপনি প্রথমে যাচাই করুন আপনি কোন নেটওয়ার্কটি রেখে নেট চালাচ্ছেন 4G নাকি 5G। কিভাবে চেক করবেন? ফোনের সেটিং অপশনে গিয়ে সামনেই দেখতে পাবেন নেটওয়ার্ক বা কানেকশন নামে একটি অপশন রয়েছে সেখানে ক্লিক করবেন। এরপর মোবাইল নেটওয়ার্ক অপশনে ক্লিক করবেন, এরপর দেখবেন 'নেটওয়ার্ক মুড' এই টাইপের কিছু একটা লেখা থাকবে সেখানে ক্লিক করবেন, ক্লিক করলে দেখতে পাবেন বেশ কয়েকটি অপশন শো করবে এমনভাবে: LTE/5G/4G/3G/2G (auto connect), 5G/4G/3G/2G (auto connect), 5G only, 4G only, 3G only, 2G only এভাবে থাকতে পারে অর্থাৎ বিভিন্ন ফোনে বিভিন্নভাবে শো করতে পারে, আপনার করনীয় হচ্ছে আপনার ফোন যদি 5G নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে তবে 5G সিলেক্ট করবেন, 4G সাপোর্ট করলে 4G সিলেক্ট করবেন আর 3G সাপোর্ট করলে 3G সিলেক্ট করবেন। আপনি এভাবে সিলেক্ট করে দেখবেন কোন নেটওয়ার্কটি সিলেক্ট করে আপনার নেট দ্রুত কাজ করছে। যেটিতে দেখবেন স্পিড ভালো পাচ্ছে সেটি সিলেক্ট রেখে নেট ব্রাউজিং করবেন।

নিয়মিত ফোন রিস্টার্ট করে ইন্টারনেট স্পিড ফাস্ট করুন

মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর উপায় একটি কার্যকর উপায় হতে পারে ফোনকে রিস্টার্ট করা। নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে একবার ফোনকে রিস্টার্ট করা উচিত। কিন্তু আমরা অনেক ব্যবহারকারী রয়েছি যারা ফোন শুধু চালিয়ে যায় কিন্তু এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখেন। আমরা মাঝেমাঝে দেখতে পায় যে ফোন কিছুটা স্লো কাজ করছে, আপনি যদি সে সময় ফোনকে রিস্টার্ট করে নেন তবে ফোনটি কিছুটা স্বাভাবিক ও দ্রুত কাজ করতে সক্ষম হয়। আবার মাঝে মাঝে দেখা যায় ফোনটি একটি জায়গায় গিয়ে থেকে গেছে আমরা যদি সে সময় ফোনকে রিস্টার্ট করে নেই তবে ফোনের ভেতরে থাকা কিছু জিনিস আবার পূর্বের ন্যায় চলে আসে এবং ফোন ফাস্ট কাজ করে। ইন্টারনেট স্পিডের ক্ষেত্রেও আমরা কিন্তু একই কাজ করতে পারি। যদি দেখেন ফোনের নেট খুব স্লো কাজ করছে তবে আপনি ফোনকে রিস্টার্ট করে এই সমস্যা থেকে বাহির হয়ে আসতে পারেন। আর মাথায় রাখবেন ফোনকে অন্তত সপ্তাহে একবার রিস্টার্ট করুন, এতে ফোন তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এবং কিছুটা দ্রুত কাজ করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

মোবাইলে ইন্টারনেট স্পিড চেক করার সেরা অ্যাপগুলো

আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে জেনে নিলাম মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর উপায় গুলো সম্পর্কে। চলুন এবার জেনে আসি মোবাইলে ইন্টারনেট স্পিড চেক করার সেরা অ্যাপগুলো কি কি সে সম্পর্কে।

মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড চেক করার অনেক অ্যাপ আপনি গুগল প্লেস্টোর বা অ্যাপল স্টোরে পেয়ে যাবেন। এখানে পাওয়া অ্যাপগুলোর মধ্য থেকে আপনি সেসব অ্যাপ নিবেন যেগুলোর রেটিং ৪.৩-৫.০০ থাকবে এবং দেখবেন সেই অ্যাপগুলো রিভিউ কেমন। এসব দিক যাচাই বাছাই করে আপনি অ্যাপ ডাউনলোড করে মোবাইলে ইন্টারনেট স্পিড চেক করে নিতে পারেন খুব সহজে।

VPN ব্যবহার করলে নেট স্লো হয় নাকি ফাস্ট হয়?

অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে, VPN ব্যবহার করলে নেট স্লো হয় নাকি ফাস্ট হয়? অনেকে ভাবে ভিপিএন কানেক্ট করে নেট চালালে স্পিড ভালো পাওয়া যায় আবার অনেকে মনে করে এতে নেটের স্পিড কমে যায়। চলুন সঠিক কোনটা জেনে নেওয়া যাক।

আসলে এই বিষয়টি নির্ভর করে VPN সার্ভারের অবস্থান ও মানের ওপর। যদি সার্ভার দূরে থাকে বা বেশি লোডেড হয়, তাহলে ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে। আমরা জানি যে, ভিপিএন ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের সার্ভারে কানেক্ট হতে পারি। তবে যেটি সত্য, কিছু ভালো মানের প্রিমিয়াম VPN সার্ভার ব্যবহার করলে কখনও কখনও স্পিড কিছুটা বাড়তেও পারে, বিশেষ করে যখন আপনার আইএসপি কিছু সাইটে সীমাবদ্ধতা দেয়। তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে, ফ্রি বা নিম্নমানের VPN ব্যবহার করলে নেট সাধারণত কিছুটা স্লো হয় এবং এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তাই VPN যদি ব্যবহার করতে হয় তবে প্রিমিয়াম VPN ব্যবহার করুন।

শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আপনাদের জানিয়েছি মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে। আমরা আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি, নেট স্লো কেন হয়? নেট স্লো হলে করণীয়? নেটওয়ার্ক স্পিড টেস্ট কিভাবে করতে হয় এবং মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে। আমরা আশা করছি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার নিকট অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url