মোবাইল ফোন গরম হওয়ার প্রধান কারণগুলো কি কি?
মোবাইল ফোন গরম হওয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। আমরা অনেকে এ
কারণগুলো সম্পর্কে জানি কিন্তু সেগুলোর দিকে তেমন নজর দেয়না বা তোয়াক্ক
করিনা। আমাদের এই গাফিলতির কারণে মোবাইল ফোন আমাদের দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং
গরম থেকে শুরু করে ফোনের যাবতীয় সমস্যা সুন্দরভাবে ফুটে উঠে। তাই আমাদের আগে
সঠিকভাবে জানতে হবে যে, মোবাইল ফোন গরম হওয়ার প্রধান কারণগুলো সম্পর্কে। চলুন
তবে বিস্তারিতভাবে জেনে আসি বিষয়টি সম্পর্কে।
মোবাইল ফোন গরম অনেক কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে এই সমস্যাটি হার্ডওয়্যারের
ভেতরে থেকে হয়ে থাকে। হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের ওপর যদি বেশ চাপ
বেড়ে যাওয়া তখন ফোন গরম হয়ে উঠে, কারণ যখন ফোনের প্রসেসর একসাথে অনেক কাজ
করতে থাকে, তখন এর ভেতরের চিপসেট স্বাভাবিকভাবেই বেশি তাপ তৈরি করে। অনেক সময়
এমন হয় যে, ফোনে অনেক অ্যাপ চালু থাকে যেগুলো ব্যবহার করা হয়না। কিন্তু সেই
অ্যাপগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে রান থেকে ফোনের ডাটা, ব্যাটারি চার্জ নষ্ট করে।
এছাড়া ফোন যদি নেটের কানেকশনে চলে আসে তবে ডেটা সিঙ্ক করে, লোকেশন
ট্র্যাক করে এবং সিস্টেম রিসোর্স ব্যবহার করে ফোনের ডাটা নষ্ট করে দেয়। আর সব
কাজ করার ফলে ফোনের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং ফোন গরম হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে
এটি হচ্ছে একটি অন্যতম কারণ।
এছাড়া আরো কিছু কারণ রয়েছে যেমন: ফোনকে চার্জে লাগিয়ে ব্যবহার করা, রোদের
আলোতে ফোন ব্যবহার করা, ফোনের ব্রাইটন্সে হাই লেভেলের করে রাখা, ফোনের
স্টোরেজ ভর্তি হয়ে যাওয়া বা ফোনের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ফাইল বা অ্যাপ রেখে
দেওয়া, ফোনকে অতিরিক্ত ব্যবহার করা এবং হেভি গেমিং করার ফলেও মোবাইল ফোন গরম
হতে পারে। এখন প্রশ্ন আসে যে, কিভাবে ফোন গরম হওয়া থেকে বাঁচানো যায়? চলুন
ধারাবাহিকভাবে ফোন গরম হওয়ার আরো বেশ কিছু কারণ সম্পর্কে আগে বিস্তারিতভাবে
জেনে নেই এবং এগুলো জানা হয়ে গেলে আমরা জানতে পারবো মোবাইল গরম না হওয়ার
উপায় সম্পর্কে।
চার্জ দিলে মোবাইল গরম হয় কেন?
মোবাইল চার্জ দিলে গরম হয় কেন এটি আজকাল সবারই প্রশ্ন। চলুন তবে
বিস্তারিতভাবে জেনে আসি যে, ফোন চার্জে দিলে ফোন গরম হয় কেন? এর পেছনে আসল
কারণ কি?
ফোন চার্জ দেওয়ার সময় গরম হওয়ার প্রধান কারণ হলো ব্যাটারির ভেতরে সক্রিয়
রাসায়নিক বিক্রিয়া। যখন চার্জার ব্যাটারিতে শক্তি পাঠায়, তখন ব্যাটারি
ইলেকট্রন গ্রহণ করে এবং এর ভেতরে উচ্চ গতিতে শক্তি প্রবাহ তৈরি হয়। এই
প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাপ উৎপন্ন হয়। আমরা যদি ফোন চার্জ দেওয়ার
সময় ফোন ব্যবহার করি, বিশেষ করে গেম খেলি বা ভারী অ্যাপ চালায়, তাহলে
প্রসেসর ও ব্যাটারি একই সঙ্গে কাজ করতে থাকে। এতে ফোনের তাপমাত্রা দ্রুত
বেড়ে যায়। আবার কম মানের চার্জার, নকল অ্যাডাপ্টার বা উচ্চ ভোল্টেজও
ব্যাটারিকে অপ্রয়োজনীয় চাপ দেয় এবং গরম হওয়ার সম্ভাবনা আরো বাড়ায়। অনেক
সময় আমরা ফোনের কাভার সহ ফোনকে চার্জে লাগিয়ে দেয়। আর ফোন চার্জে দেওয়ার সময়
যদি গরম হয় তবে কাভারের ফলে সেই গরমের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে; কেননা
কাভার থাকার জন্য ফোনের তাপমাত্রা বেরতে পারেনা, এতে করে অতিরিক্ত তাপ জমে
থাকে এবং ফোন দ্রুত গরম হয়ে যায়।
মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার সময় ফোন গরম হওয়া স্বাভাবিক হলেও অস্বাভাবিক গরম
হওয়া ব্যাটারির জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাই নিরাপদ
চার্জিং অভ্যাস বজায় রাখা অত্যান্ত জরুরি ফোনের ব্যাটারি হেলথ এবং ডিভাইসের
দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষার জন্য।
ডাটা চালু করলে মোবাইল গরম হয় কেন?
আমরা উপরে জেনেছি মোবাইল গরম হয়ে যায় কেন সে সম্পর্কে। তবে ফোন গরম হওয়ার
আরো অনেকগুলো কারণ রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করবো।
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক ডাটা চালু করলে মোবাইল গরম হয় কেন সে
সম্পর্কে।
ফোনের ডাটা বা নেট কানেকশন চালু করলে নেটওয়ার্ক মডিউল ক্রমাগত ইন্টারনেট
সিগন্যাল পাঠায় ও গ্রহণ করে। আমরা হয়তো অনেকেই এই বিষয়টি জানিনা, যখন মোবাইল
ডাটা সক্রিয় থাকে, তখন ফোন ক্যারিয়ারের সঙ্গে নিয়মিত সংযোগ রাখে, সিগন্যাল
আপডেট করে এবং ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলো ডেটা সিঙ্ক করতে থাকে। এগুলো ফোনের
প্রসেসর ও রেডিও অ্যান্টেনার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে নেটওয়ার্ক
দুর্বল হলে ফোন আরো বেশি শক্তি ব্যবহার করে সিগন্যাল টেনে আনার চেষ্টা করে।
এতে ব্যাটারি দ্রুত কমে এবং ফোন গরম হতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম, মেসেঞ্জার অ্যাপ, ক্লাউড স্টোরেজ, ইমেইল অ্যাপ সবই ডেটা
ব্যবহার করে নিজ নিজ কাজ চালিয়ে যায়। ফলে ডেটা অন থাকা মানেই ফোন ক্রমাগত
সক্রিয় থাকে।
আবার দেখা যায়, অনেক সময় ৪জি বা ৫জি নেটওয়ার্ক চালু থাকলে ফোনের অ্যান্টেনা
উচ্চ ক্ষমতায় কাজ করে। বিশেষ করে ৫জি নেটওয়ার্কে সিগন্যাল আদান-প্রদান অনেক
দ্রুত হয়, যাতে ব্যাটারির চাপ বৃদ্ধি পায়। ফোনের বডির ভেতরে অ্যান্টেনা,
ব্যাটারি এবং প্রসেসর পাশাপাশি থাকে, তাই এদের যেকোনো একটি বেশি গরম হলে পুরো
ফোনই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ডেটা চালু থাকা অবস্থায় ভারী ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা বা
ভিডিও কল করলে তাপ আরো বেশি তৈরি হয়। এই অবস্থায় ফোন খুব গরম হলে কিছু সময়ের
জন্য ডেটা অফ করে রাখা বা নেটওয়ার্ক মোড লোয়ার ব্যান্ডে রাখায় আমাদের জন্য
উপকারী হবে।
অতিরিক্ত অ্যাপ ব্যবহার করলে ফোনের তাপমাত্রা কিভাবে বৃদ্ধি পায়?
অতিরিক্ত অ্যাপ ব্যবহার করলে ফোনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এটি একটি লক্ষ্যণীয়
বিষয়। আমরা অনেকেই আছি যারা একসাথে অনেকগুলো অ্যাপ ব্যবহার করি। আবার অনেকেই
আছি যারা বিনা প্রয়োজনী অনেকগুলো অ্যাপ রান করে থাকে। আর এই এতগুলো অ্যাপ রান
থাকার কারণে ফোনের প্রসেসরকে উচ্চ গতিতে কাজ করতে হয়। বিশেষ করে ফেসবুক,
মেসেঞ্জার, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, ব্রাউজার, গেম, ক্যামেরা অ্যাপ বা বড়
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ সহ ভারী অ্যাপগুলো প্রচুর র্যাম ও সিপিইউ ব্যবহার করে
থাকে। যখন একাধিক অ্যাপ একসাথে ওপেন থাকে বা করা হয়, ওপেন থাকা অ্যাপগুলো
আপনি সেই অ্যাপ চালান বা না চালান তখন প্রতিটি অ্যাপ নিজের মতো করে
ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করে, ডেটা সিঙ্ক করে এবং বিভিন্ন ফাংশন চালিয়ে যায়। এতে
ফোনের রিসোর্সের ওপর চাপ বাড়ে। আর প্রসেসর যত বেশি কাজ করবে, তত বেশি তাপ
উৎপন্ন হবে। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ চালানো বা ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে দেওয়া ফোনের
ব্যাটারিকে দ্রুত ক্ষয় করে, ফলে ফোন নিজেরাই রেগে-মেগে গরম হয়ে ওঠে। তাই
উচিত হবে, অ্যাপ ব্যবহার শেষে বন্ধ করে দেওয়া, অটো-সিঙ্ক কমানো এবং
প্রয়োজন নেই এমন অ্যাপ আনইনস্টল করে দেওয়া যাতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্টোরেজ ফুল হয়ে গেলে ফোন গরম হয়
স্টোরেজ ফুল হয়ে গিয়ে ফোনকে গরম করা এটি একটি কমন কারণ। আমাদের অনেকের ফোনের
স্টােরেজ ভর্তি হয়ে গেলেও আমরা তা তোয়াক্কা করিনা। ফোনের স্টোরেজ যদি ভর্তি
হয়ে যায় তবে ফোনের উপর প্রচুর চাপ পড়ে আর সেই চাপ সহ্য করতে না পেড়ে ফোন নিজে
থেকেই গরম হতে শুরু করে। ফোনের স্টোরেজ যত ফাঁকা থাকবে আমাদের জন্য তত উপকার
হবে। কেননা, বর্তমানে যে অ্যাপ বা সফটওয়্যারগুলো আমরা ব্যবহার করছি সেগুলো
সাইজ খুবই বেশি এবং এগুলোর জন্য জায়গা বেশি প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের যথেষ্ট
পরিমাণে স্টোরেজ ফোনের মধ্যে ফাঁকা রাখা উচিত। আপনি চাইলে যেসকল অ্যাপের লাইট
বা কম সাইজের অ্যাপগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন, এতে করে আপনার
ফোনের স্টোরেজ ফুল হবেনা বরং বেচে যাবে।
আর বিশেষ করে যেটি করবেন, ফোনের জমে থাকা অপ্রয়োজনী ফাইল, ছবি, অ্যাপ বা
অন্যান্য যাবতীয় জিনিস যেগুলো আপনার কাজে আসেনা সেগুলো পুরোপুরি ডিলিট করে
দিবেন। আর নিয়মিত ফোনের স্টোরেজ ক্লিন করবেন। আপনার ফোনের সেটিং থেকে
স্টােরেজ গিয়ে চেক করবেন কেমন পরিমাণে ময়লা জমা পড়ে রয়েছে, সেখান থেকে এগুলো
ক্লিয়ার করে নিবেন; এতে করে ফোনের স্টোরেজ ফুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে এবং
আপনার ফোন গরম হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।
গেমিং বা ভারী কাজের সময় ফোন গরম হওয়ার কারণ কি?
মোবাইল গরম হয় কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ
বলতে পারি, ভারী গেমিং বা ভারী কাজ করার জন্য ফোনকে ব্যবহার করা। চলুন
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জেনে আসি।
যারা গেমার তারা গেম খেলবে স্বাভাবিক। তবে গেমিং চলাকালীন আমাদের ফোনের
ভেতরে কি হয় আমরা কি তা জানি? গেমিং চলাকালীন ফোনের প্রসেসর, জিপিইউ এবং
র্যাম একই সময়ে হাই লোডে কাজ করে। গেমগুলোতে ভারী গ্রাফিক্স, রিয়েল-টাইম
রেন্ডারিং, উচ্চ রিফ্রেশ রেট, এবং দ্রুত অ্যাকশন থাকে। আর এসব কাজ পরিচালনা
করতে প্রসেসরকে অনেক শক্তি ব্যবহার করতে হয়। শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ যত
বেশি, তাপ উৎপাদন তত বেশি। গেমিংয়ের সময় স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সাধারণত
বেশি থাকে, যা ফোনের ব্যাটারির ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করে। আবার গেমটি যদি হয়
নেট কানেকশনের মাধ্যমে মানে অনলাইন ভিত্তিক তবে ফোনের অ্যান্টেনা সিগনাল
পাঠাতে ও গ্রহণ করতে থাকে, যা ফোনকে আরো গরম করে। তাই গেম খেলার সময় ফোনের
তাপমাত্রা বাড়া স্বাভাবিক একটি লক্ষণ।
আবার আমরা অনেকেই ভারী কাজের জন্য ফোনকে ব্যবহার করি যেমন: ভিডিও এডিটিং,
৩ডি রেন্ডারিং, হাই কোয়ালিটি ভিডিও দেখা বা লম্বা সময় ক্যামেরা ব্যবহার
করা, এসব কাজ করলেও ফোন দ্রুত গরম হয়। এর কারণ হলো এসব অ্যাপ ফোনের
হার্ডওয়্যারকে পূর্ণ ক্ষমতায় ব্যবহার করে। যদি ফোনের ভেন্টিলেশন ভালো না
হয় বা কভার বেশি মোটা হয়, তাপ ঠিক মতো বের হতে পারে না। তখন ফোন
দ্রুতগতিতে গরম হতে থাকে। অনেকে চার্জে রেখে গেম খেলে, যা ব্যাটারি ও
প্রসেসরের তাপকে একসাথে বাড়িয়ে দেয়। এটি শুধু ফোন গরমই করে না, বরং
দীর্ঘমেয়াদে ব্যাটারির ক্ষমতাও নষ্ট করে। তাই গেমিংয়ের আগে ফোন ঠান্ডা
করে নেওয়া এবং অতিরিক্ত সময় ধরে খেলা এড়িয়ে চলা উচিত।
খারাপ ব্যাটারি বা চার্জারের কারণে ফোন অতিরিক্ত গরম কেন হয়?
ব্যাটারির কারণে ফোন গরম হতে পারে আবার চার্জারের কারণেও হতে পারে। এখন
প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে হয়? চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ফোনের ব্যাটারি যদি পুরনো হয়ে যায় বা ব্যাটারির ভিতরে কোন ক্ষতি থাকে,
তাহলে চার্জ ধারণ করার ক্ষমতা কমে যায়। ব্যাটারি দুর্বল হলে শক্তি গ্রহণের
সময় ভেতরে অস্থিতিশীল রাসায়নিক ক্রিয়া তৈরি হয়, যা দ্রুত তাপ উৎপন্ন
করে। এ ধরনের ব্যাটারি চার্জ নিলেও দ্রুত কমে যায় এবং শক্তি প্রবাহ
সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে ফোন সহজেই গরম হয়ে ওঠে। নকল বা
নিম্নমানের ব্যাটারির ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা যায়। অনেক সময় দুর্বল
ব্যাটারি ফোনের প্রসেসরকে ঠিক মতো বিদ্যুৎ দিতে পারে না, ফলে আরো লোড পড়ে,
যা ফোনের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর।
আবার নিম্নমানের চার্জার ব্যবহার করলে ফোন অতিরিক্ত গরম হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কারণ এসব চার্জার ভোল্টেজ ও অ্যামপিয়ার ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
কখনো বেশি চার্জ পাঠায়, কখনো কম। এই অস্থিতিশীল শক্তি ব্যাটারির মধ্যে
অস্বাভাবিক গরম তৈরি করে। আবার নকল ডেটা কেবল সঠিক মাত্রায় শক্তি পরিবহন
করতে পারে না, ফলে চার্জিং প্রক্রিয়ায় তাপ বেড়ে যায়। অনেক চার্জার ও
কেবল সেফটি সার্টিফিকেশন ছাড়া বাজারে পাওয়া যায় এবং এগুলো ফোনের জন্য খুবই
ক্ষতিকর। তাই ব্যাটারি বা চার্জার যদি খারাপ হয়, তাহলে ফোন দ্রুত গরম হওয়ার
পাশাপাশি বিস্ফোরণের ঝুঁকিও থাকে। আমাদের উচিত, ফোনের ব্যাটারি বা চার্জার
কেনার সময় অনুমোদিত দোকান বা শোরুম থেকে নেওয়া।
সূর্যের আলো বা বাইরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ফোনে কীরূপ প্রভাব ফেলে?
ফোন গরম হওয়ার কারণগুলো মধ্যে এটি এমন একটি কারণ যা সম্পর্কে আমরা অনেকেই
হয়তো বা জানিনা। তাই চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে আসি।
সূর্যের সরাসরি আলোতে ফোন ব্যবহার করলে ফোনেরর বডি দ্রুত তাপ শোষণ করে।
বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে বাইরে ফোন নিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা বা নেট ব্রাউজিং
করা, এসব কাজ করলে ফোনের তাপমাত্রা খুব দ্রুত বেড়ে যায়। ফোনের স্ক্রিন
সূর্যের আলোর নিচে বেশি আলো উৎপন্ন করে, যা ব্যাটারিকে চাপ দেয়। আর ফোনের
ভেতরের প্রসেসর ও ব্যাটারি তাপমাত্রা বাড়লে ফোনের সেফটি মেকানিজম সক্রিয়
হয় এবং ফোন ধীরে কাজ করতে থাকে। অনেক সময় ফোন নিজে থেকে বন্ধ হয়ে যায়
যাতে সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাই রোদে লম্বা সময় ফোন ব্যবহার করা
যাবেনা এবং এ বিষয় আমাদের সর্তক থাকা জরুরি।
অপরদিকে, বাইরের তাপমাত্রা বেশি হলে ফোনের তাপ বের হবার সুযোগ কমে যায়।
সাধারণত ফোনের ভেতরে তাপ নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়া রয়েছে, কিন্তু বাইরের
পরিবেশ যদি বেশি গরম থাকে, তাহলে ফোন নিজেকে ঠান্ডা রাখতে পারে না। এতে
ব্যাটারি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চার্জ কমে যায়। গাড়ির ভেতর ফোন রেখে
দিলে তাপমাত্রা কয়েক মিনিটেই অত্যান্ত বেড়ে যায়, যা ব্যাটারি ফুলে যাওয়া
বা ফোন পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই গরম পরিবেশে ফোন ব্যবহার না
করে ছায়ায় বা ঠান্ডা স্থানে ফোন ব্যবহার করলে ফোনের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
ফোন গরম হলে ডিভাইসের ক্ষতি কীরূপ হতে পারে?
ফোন অতিরিক্ত গরম হলে এর ভেতরের অংশগুলো দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তাই
চলুন জেনে আসি ফোন গরম হলে ডিভাইসের ক্ষতি কীরূপ হতে পারে সে সম্পর্কে এবং
এ বিষয়টি জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
-
প্রথমে ব্যাটারিতে সরাসরি প্রভাব পড়ে। ব্যাটারি সবসময় একটি নির্দিষ্ট
তাপমাত্রার মধ্যে ভালোভাবে কাজ করে। তাপমাত্রা বেশি হলে ব্যাটারির
ভেতরে রাসায়নিক বিক্রিয়া অস্থির হয়ে যায়। এতে ব্যাটারি দ্রুত চার্জ
হারায়, ফুলে যেতে পারে বা স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
-
দীর্ঘদিন ফোন বেশি গরম হয়ে থাকলে ব্যাটারির লাইফ কমে যায় এবং ফোন খুব
দ্রুত চার্জ কমাতে থাকে।
-
প্রসেসরও অতিরিক্ত গরম অবস্থায় স্থিরভাবে কাজ করতে পারে না। এতে ফোন
হ্যাং করা, ল্যাগ করা এবং অ্যাপ ক্র্যাশ হওয়ার মতো সমস্যা দেখা
দেয়।
-
রম, র্যাম এবং সার্কিট বোর্ডও অতিরিক্ত তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা
ডিভাইসের স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়।
- ডিভাইসের বডি বা স্ক্রিনেও তাপমাত্রার প্রভাব পড়ে।
-
বিশেষ করে AMOLED স্ক্রিন তাপে দীর্ঘদিন থাকলে পিক্সেল বার্ন বা
স্ক্রিন ডিসকালারেশন দেখা দিতে পারে।
-
ফোনের ক্যামেরা সেন্সরও অতিরিক্ত তাপে কাজ করতে পারে না, এতে ছবি ঝাপসা
আসতে পারে বা ক্যামেরা অ্যাপ নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়।
-
অতিরিক্ত তাপের কারণে ফোনের ভেতরের আঠা নরম হয়ে বডির জল-ধুলো প্রতিরোধ
ক্ষমতা কমে যায়।
-
অনেক সময় ফোন নিজে থেকে শাটডাউন হয়ে যায়, যা সেফটি সিস্টেম সক্রিয়
হওয়ার কারণে ঘটে।
-
বারবার এমন হলে ডিভাইস স্থায়ী ক্ষতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
তাই ফোনকে গরম হওয়া থেকে রক্ষা করা নিরাপদ ব্যবহারের গুরুত্ব অনেক বেশি।
স্মার্টফোন গরম হয়ে গেলে কি করবেন বা ফোন ঠান্ডা করার উপায়
আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে জেনে এসেছি মোবাইল গরম হয়ে যায় কেন সে সম্পর্কে।
আমরা মোবাইল ফোন গরম হওয়ার কারণগুলো সহ এটিও জেনেছি মোবাইল গরম হলে কি করনীয়
সে সম্পর্কে। তবুও বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কার করার জন্য আমরা এই পয়েন্ট আবারও
জানবো মোবাইল গরম না হওয়ার উপায় সম্পর্কে।
-
আপনার ফোন যদি দেখেন অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে তবে এই গরম হওয়া থেকে
ঠেকাতে আপনাকে সর্বপ্রথম ফোনকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম দিতে হবে। কিছু
সময়ের জন্য স্ক্রিন অফ রেখে ফোনকে পাশে রাখলে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে
স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে আসে।
-
ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বন্ধ করে দিলে প্রসেসরের
চাপ কমে এবং ফোন দ্রুত ঠান্ডা হয়।
-
ফোনে ফুল চার্জ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চার্জার খুলে নেওয়া উচিত।
-
স্ক্রিন ব্রাইটনেস কমিয়ে দিলে ব্যাটারির লোড কমে যায় এবং ফোন সহজেই
ঠান্ডা হয়।
-
অনেকেই ভুল করে ফ্রিজে বা ঠান্ডা স্থানে ফোন রাখেন, যা সম্পূর্ণ ভুল।
এতে ফোনের ভেতরে আর্দ্রতা তৈরি হয়ে আরো ক্ষতির কারণ হতে পারে।
-
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইনস্টল করা এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা সীমাবদ্ধ করা
ভালো।
-
দীর্ঘ সময় গেম খেলা বা ভারী কাজ করার সময় মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়া
উচিত।
-
নকল চার্জার বা নকল কেবল ব্যবহার না করে ভালো মানের চার্জার ব্যবহার
করলে ব্যাটারি নিরাপদ থাকে।
-
রোদে ফোন ব্যবহার না করে ছায়ায় ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।
-
ফোনের কভার খুব মোটা হলে তাপ বাইরে বের হতে পারে না, তাই হালকা কেস
ব্যবহার করা ভালো।
-
নেটওয়ার্ক দুর্বল হলে ফোন বেশি গরম হয়, তাই প্রয়োজনে ফ্লাইট মোড অন
করে কিছুক্ষণ নেটওয়ার্ক সার্চ বন্ধ রাখা যেতে পারে।
আপনি যদি এই উপায়গুলো অনুসরণ করে চলেন তবে আপনার ফোন হবে দীর্ঘস্থায়ী ও
ঠান্ডা এবং আপনি নিরাপদ এবং দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারবেন।
শেষ মন্তব্য
আমরা আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে জেনে নিলাম মোবাইল ফোন গরম হয়ে
যাচ্ছে জানুন কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। আমরা জেনেছি ফোন গরম কেন হয়? কারণগুলো
কি কি এবং ফােনকে গরম হওয়া থেকে কিভাবে বাঁচানো যায় সে সম্পর্কে। মোবাইল
ফোন গরম হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সচেতন থাকলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা
যায়, যা আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সু-স্পষ্ট ধারণা পেয়েছি। মূল বিষয়
হলো, ফোনকে অপ্রয়োজনীয় চাপ না দেওয়া এবং ফোনকে ঠান্ডা রাখার অভ্যাস করা।
প্রতিদিনের ব্যবহারে কিছু ছোটখাট পরিবর্তনই ফোনকে দীর্ঘদিন ভালো রাখতে সাহায্য
করবে।