কিভাবে মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখা যায়?
কিভাবে মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখা যায় এটি আজকাল অনেকে প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নটি সবার মুখে মুখে শুনা যায়। তাই আমরা আজকে বিস্তারিতভাবে জানবো মোবাইল ব্যাটারির চার্জ বেশিক্ষণ ধরে রাখার উপায় কী? সে সম্পর্কে।
মোবাইল ফোন আমাদের নিত্য দিনের বন্ধু হয়ে গেছে। আমরা যেখানেই যায়না কেন মোবাইল ফোন সাথে নিতে ভুলিনা। তবে ফোনে যদি যথেষ্ট পরিমাণে চার্জ না থাকে বা হঠাৎ দেখেন ফোনের ১০০% চার্জ নেমে গেছে ৫০% তখন মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়।
পোস্ট সূচিপত্র: মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়
- কিভাবে মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখা যায়?
- নতুন মোবাইল চার্জ দেওয়ার নিয়ম
- স্মার্টফোন কখন চার্জ দিতে হবে এবং কখন বন্ধ করতে হবে?
- স্মার্টফোনের ব্যাটারি ফুল চার্জ করা কি ক্ষতিকর?
- মোবাইল চার্জে রেখে ব্যবহার করা যাবে কি?
- আসল চার্জার ও ক্যাবল ব্যবহার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্স কিভাবে ব্যাটারি নষ্ট করে?
- স্ক্রিন ব্রাইটন্সে ব্যাটারির উপর কতটা প্রভাব ফেলে?
- ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে আরো কিছু টিপস
- ব্যাটারি ঠিক রাখার জন্য দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস
- মোবাইলের ব্যাটারি নষ্ট হলে কী করা উচিত?
- শেষ মন্তব্য
কিভাবে মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখা যায়?
- আমরা অনেকেই জানিনা ফোন কখন চার্জে দেওয়া উচিত এবং কখন চার্জ থেকে খোলা উচিত। আমরা অনেকেই আছি যারা ফোন দীর্ঘক্ষণ চার্জে লাগিয়ে রাখি।
- ফোনকে ঘনঘন চার্জে লাগানোর ফলে ব্যাটারি তার ধারণ ক্ষমতাকে হারিয়ে ফেলে এবং স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বিগতিক অবস্থায় চলে যায়। তাই নিয়ম মেনে চার্জ লাগানো উচিত।
- আমরা অনেকে আবার নকল ও নিম্নমানের চার্জার ব্যবহার করে ফোন চার্জ করি যা ফোনের ব্যাটারির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
- ফোনের মধ্যে এমন কিছু অ্যাপ্স রয়েছে যেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে রান অবস্থায় থাকে এবং ব্যাটারিকে অপটিমাইজ করে চার্জ শুষে নেয়। তাই আমাদের উচিত সেই অ্যাপ্সগুলোকে ব্যাটারির অপশন থেকে রাস্টিকেট করে রাখা যেন ব্যাটারিকে অপটিমাইজ করতে না পারে এবং ব্যাটারিকে নষ্ট করে। যারা প্রশ্ন করে থাকেন ফোনের চার্জ তাড়াতাড়ি যায় কেন তাদের উত্তর হচ্ছেই এটি।
- বেশি সময় ধরে গেমিং করা এবং ফোন চার্জে দিয়ে গেমিং করা। এর ফলে ব্যাটারির উপর প্রেসার পরে এবং ব্যাটারি তার ধারণা ক্ষমতাকে হারিয়ে ফেলে।
- আপনি ফোনের মধ্যে একটি অ্যাপ্স চালাচ্ছেন, কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেকগুলো অ্যাপ্স চালু আছে। এমন পরিস্থিতিতে চালু থাকা অ্যাপ্সগুলোতে চার্জ কেটে নেয় এবং ফোনের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত গরম বা রোদের তাপে ফোন ব্যবহার করার ফলে ফোন গরম হয়ে যায় এবং ব্যাটারি তখন দ্রুত চার্জ ছেড়ে দেয়, এতে ব্যাটারির চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যায়।
- আমরা কাজের ক্ষেত্রে ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস ইত্যাদি সার্ভিস চালু করি। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে গেলে এগুলোকে বন্ধ না করেই অন্যান্য কাজ করি। এতে করে ব্যাটারি সেই চালু থাকা ওয়াইফাই, ডাটা, ব্লুটুথ, জিপিএস ইত্যাদি জিনিসে চার্জ কেটে নেই এবং কেটে নেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে এগুলো রান বা চালু অবস্থায় রয়েছে।
- আমরা অনেকেই আছি যারা ফোনের ব্রাইটন্সে সবসময় ফুল করে রাখি সেটা হোক অন্ধকারে বা আলোতে। ব্রাইটন্সে ফুল করে রাখার ফলে ব্যাটারির উপরে প্রেসার পরে এবং চার্জও কাটতে থাকে। তাই ব্রাইটন্সেকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা উচিত।
- এখনকার সময়ের ফোনগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সফটওয়্যার আপডেট। সময় মতো সফটওয়্যার আপডেট না দিলে ফোনের ভেতরে অনেক ভাইরাস জমা পরে থাকে এবং ফোন কিছুটা স্লো বা ল্যাগ করার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই সময় মতো সকল আপডেট গুলোকে করে পুরনো ভার্সনকে ফোন থেকে বিদায় দিয়ে নতুন ভার্সনে ফোন চালানো উচিত।
নতুন মোবাইল চার্জ দেওয়ার নিয়ম
স্মার্টফোন কখন চার্জ দিতে হবে এবং কখন বন্ধ করতে হবে?
স্মার্টফোনের ব্যাটারি ফুল চার্জ করা কি ক্ষতিকর?
কিভাবে মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখা যায়? এই প্রশ্নের একটি সহ উত্তর হচ্ছে এই পয়েন্টটি, তাই চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে আসি।
হ্যাঁ স্মার্টফোনের ব্যাটারিকে প্রতিদিন ১০০% ফুল চার্জ করা ক্ষতিকর। বর্তমান ফোনগুলোর ব্যাটারির ধরণ হিসেবে দেওয়া হয় লিথিয়াম-আয়ন। এই ব্যাটারি মূলত সবচেয়ে ভালো কাজ করে ২০% থাকা অবস্থায় চার্জিং করা এবং ৮০-৯০% চার্জ হয়ে গেলে চার্জিং থেকে খুলে নেওয়া। আমরা অনেকেই আছি যারা ফোন ১০০% চার্জ করি সবসময়, আবার আমাদের অনেকের একটি বদঅভ্যাস রয়েছে সারারাত চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া, যা ব্যাটারির ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। এভাবে সারারাত ফোনকে চার্জে লাগিয়ে রাখার ফলে ব্যাটারির ভিতরে তাপ তৈরি হয় এবং মাঝে মাঝে যদি বিদ্যুৎতের ভোল্টেজও বেড়ে যায় তবে ব্যাটারির উপর খুব বেশি চাপ পড়ে, ফলে সময়ের সাথে ব্যাটারির সেল দুর্বল হয়ে যায়।
মোবাইল চার্জে রেখে ব্যবহার করা যাবে কি?
আসল চার্জার ও ক্যাবল ব্যবহার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্স কিভাবে ব্যাটারি নষ্ট করে?
আমরা যখন নতুন কোনো একটি অ্যাপ্স ডাউনলোড করে ইন্সটল করি তখন সেটি আমাদের ব্যাটারির ব্যাকগ্রাউন্ডের রান করে যা অটোমেটিক একটি মাধ্যম। আপনি যখন সেই অ্যাপ্সটি ব্যবহার করবেন তখন অ্যাপ্সটি অটো ব্যাটারিকে অপটিমাইজ করবেন। আর আপনি যদি সেই অ্যাপ্সটি থেকে বের হয়ে অন্য আরেকটি অ্যাপ্স ব্যবহার করেন তবুও কিন্তু সেই অ্যাপ্সটি ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকবে এবং ব্যাটারিকে অপটিমাইজ করবে। তাই আমাদের যদি প্রতিটি অ্যাপ্সের ব্যাটারি অপটিমাইজিং অপশনটিকে ডিজিবাল করে রাখা। এখন প্রশ্ন আসে যে, এটি কিভাবে করা যায়? চলুন জেনে আসি।
- প্রথমে আপনি যে অ্যাপ্সটির ব্যাটারি অপটিমাইজিং বন্ধ করতে চাচ্ছেন সেই অ্যাপ্সটিতে ট্যাপ করে ধরে রাখুন।
- এরপর একটি অপশন পাবেন App Info বা ডান দিকে ছোট আকারে i চিহ্ন। বিভিন্ন ফোনে বিভিন্ন রকম থাকে। তবে বেশিরভাগ ফোনগুলোতে এই দুইভাবে দেখায়। এখন আপনার কাজ সেখানে ক্লিক করবেন।
- ক্লিক করলে আপনি App Info তে চলে যাবেন। সেখান থেকে হালকা স্ক্রোল ডাউন করে নিচের দিকে আসলে দেখতে পাবেন Battery নামে একটি অপশন সেখানে ক্লিক করবেন।
- ক্লিক করা মাত্রই আপনি দেখতে পাবেন তিনটি অপশন, Unrestricted, Optimized, Restricted। আপনি দেখতে পাবেন প্রথম অবস্থায় আপনার অ্যাপ্সে Optimized ক্লিক করা আছে। যদি দেখেন যে Optimized ক্লিক করা আছে তবে আপনি Restricted ক্লিক করে দিবেন তাহলেই হয়ে যাবে। এতে করে অ্যাপ্সটি আপনার ব্যাটারিতে প্রভাব ফেলতে পারবেনা এবং অ্যাপ্স বন্ধ করে দেওয়ার পরেও চার্জ কাটবেনা। আপনি উপরের ছবিটি ফলো করে সম্পূর্ণ কাজটি করতে পারেন।
স্ক্রিন ব্রাইটন্সে ব্যাটারির উপর কতটা প্রভাব ফেলে?
ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে আরো কিছু টিপস
কিভাবে মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখা যায় আমরা সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনেছি। তবে আমরা আপনাদের আরো কিছু টিপস দিতে চাই যা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে আমরা মনে করি।
নিচে ব্যাটারি লাইফ বাড়ানোর ৫টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো:
- অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বন্ধ রাখুন: ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান অ্যাপগুলো ব্যাটারির খরচ বাড়ায়, তাই অ্যাপগুলো ব্যবহার না করলে সেগুলো বন্ধ করে দিন।
- স্ক্রিন টাইমআউট কমান: ফোনে স্ক্রিন যত কম সময় জ্বলে থাকবে, তত ব্যাটারির উপর চাপ কমবে এবং ব্যাটারির কম শক্তি খরচ করবে।
- ওয়াইফাই, ডাটা, ব্লুটুথ ও জিপিএস বন্ধ রাখুন: ওয়াইফাই, ডাটা, ব্লুটুথ ও জিপিএস ব্যবহার শেষ হয়ে গেলে এগুলোকে বন্ধ করে রাখুন। এগুলো বন্ধ রাখলে ব্যাটারি অনেক সাশ্রয় হয় এবং চার্জ দীর্ঘ সময় থাকে
- ডার্ক মোড ব্যবহার করুন: OLED বা AMOLED ডিসপ্লের ফোনে ডার্ক মোড চালু রাখলে ব্যাটারি কম খরচ হয়। তাই আপনি আপনার ফোনের ডার্ক মোডকে অন করে রাখুন।
- সফটওয়্যার আপডেট রাখুন: ফোনকে নিয়মিত আপডেট করলে ফোনের পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট উন্নত হয় এবং ব্যাটারি লাইফ বাড়ে। তাই আপনি এই কাজটি অবশ্যই করবেন এবং প্রতিনিয়ত চেক করে সফটওয়্যার আপডেট চাইলে দিয়ে দিবেন।
ব্যাটারি ঠিক রাখার জন্য দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস
- ফোনে চার্জ সবসময় ২০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে রাখলে ব্যাটারির আয়ু বাড়ে এবং ব্যাটারির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না।
- স্মার্টফোনকে সারারাত চার্জে রেখে দেবেন না, এতে ব্যাটারি গরম হয়ে ক্ষতি হয়।
- অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করুন, কারণ নকল চার্জার ব্যাটারির সেল নষ্ট করে দেয়।
- গরম জায়গায় ফোন ব্যবহার থেকে এড়িয়ে চলুন, অতিরিক্ত তাপে ব্যাটারি দ্রুত দুর্বল হয়ে যায়।
- স্ক্রিনের ব্রাইটন্সে কমিয়ে রাখুন এবং সুবিদার্থে অটো ব্রাইটন্সে অন করে রাখুন এতে চার্জ দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে বন্ধ রাখুন, কারণ এগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চার্জ খরচ করে।
- সপ্তাহে একবার হলেও ফোন রিস্টার্ট করুন। ফোন রিস্টার্ট করলে সিস্টেম রিফ্রেশ হয় এবং ব্যাটারির কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে।
- ডার্ক মোড চালু করে রাখুন। ডার্ক মোড চালু রাখলে OLED বা AMOLED ডিসপ্লেতে ব্যাটারির কার্যক্ষমতাকে ভালো রাখে।
- ওয়াইফাই, ডাকা, ব্লুটুথ বা জিপিএস ব্যবহার না করলে বন্ধ রাখুন, এগুলো অজান্তেই চার্জ খেয়ে ফেলে।
- পাশাপাশি ফোনের সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট রাখলে ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট উন্নত হয় ও ফোন দীর্ঘসময় ভালো পারফরম্যান্স দেয়।



